কিডনির কোনো সমস্যা হলে অনেকেই ঘাবড়ে যান। অথচ সামান্য সচেতনতায় সহজেই কিডনি রোগ প্রতিরোধ করা যায়। এ ক্ষেত্রে কিডনি জটিলতার কারণগুলো প্রতিরোধ করা বা নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
ক্রনিক কিডনি ডিজিজ বা দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী কিডনি রোগের শেষ ধাপের রোগীদের জীবনভর ডায়ালাইসিস করতে হয় অথবা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু এগুলো ব্যয়সাপেক্ষ। তাই ক্রনিক কিডনি ডিজিজ প্রতিরোধই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, বিশ্বজুড়ে কিডনি বিকলের অন্যতম কারণ হলো ডায়াবেটিস। দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস, বিশেষত অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে কিডনির কার্যকারিতা কমে গিয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে প্রোটিন বা আমিষ যেতে শুরু করে। এ সমস্যাকে ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি বলে। এর শেষ ধাপ হলো এন্ড স্টেজ রেনাল ডিজিজ।
বংশগত কারণে আমাদের দেশে ডায়াবেটিক নেফ্রোপ্যাথি হওয়ার প্রবণতা বেশি। কাজেই ডায়াবেটিস ধরা পড়ার প্রথম থেকেই কিডনির বিষয়ে সচেতন হতে হবে। ৬ থেকে ১২ মাস অন্তর রক্তের ক্রিয়েটিনিন ও প্রস্রাবের আমিষ পরীক্ষা করতে হবে। এসব পরীক্ষা খুবই অল্প খরচে করা যায়। নিয়মিত এসব পরীক্ষায় ডায়াবেটিসজনিত কিডনি রোগ শুরুতেই নির্ণয় করা সম্ভব। আর শুরুতে ধরা পড়লে, আর খুব ভালো করে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে এন্ড স্টেজ রেনাল ডিজিজ প্রতিরোধ করা যায়।
উচ্চ রক্তচাপ কিডনি বিকলের আরেকটি অন্যতম কারণ। অনেক রোগীই মনে করেন, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে ঘাড়ে বা মাথায় ব্যথা হবে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, হাইপারটেনশন বা উচ্চ রক্তচাপ মূলত নীরব ঘাতক। অর্থাৎ রক্তচাপ অনেক বেশি হলেও রোগী অনেক সময় উপসর্গ অনুভব করেন না। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপের রোগীরাও একসময় কিডনি রোগে আক্রান্ত হন। কাজেই উচ্চ রক্তচাপের রোগীর জীবনযাপন প্রণালি, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন, নিয়মিত রক্তচাপ পরিমাপ ও প্রয়োজনীয় ওষুধ গ্রহণ করে যেতে হবে। বয়স হলে রক্তচাপ একটু বাড়তি থাকে—এমনটা ভেবে অনেকেই বিষয়টিকে অবহেলা করেন। অনেকে ওষুধ শুরু করেও বন্ধ করে দেন। কিন্তু উপসর্গ থাকুক বা না থাকুক, উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়লে এর ওষুধ সারা জীবন খেয়ে যেতে হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া এক দিনের জন্যও ওষুধ বন্ধ করা উচিত নয়।
গ্লোমেরুলোনেফ্রাইটিস কিডনির একটি রোগ। এ রোগের প্রধান লক্ষণ শরীর, হাত-পা ফুলে যাওয়া। হেপাটাইটিস-বি ও সি ভাইরাস যকৃতের অসুখ। এই দুটি ভাইরাসসহ অনেক ভাইরাসই কিডনিকেও আক্রান্ত করে। এ ছাড়া মূত্রতন্ত্রের নানা বাধাজনিত কারণে, বারবার সংক্রমণে, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করলে এবং বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগে কিডনি জটিলতা দেখা দিতে পারে। কাজেই যেকোনো সমস্যায় অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শে চিকিৎসা নিতে হবে।
কিডনি রোগ প্রতিরোধে কিডনি সম্পর্কে জানুন, ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করুন।
Link : https://www.prothomalo.com/life-style/article/1644408/%E0%A6%95%E0%A6%BF%E0%A6%A1%E0%A6%A8%E0%A6%BF-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%95%E0%A6%B2%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%86%E0%A6%97%E0%A7%87%E0%A6%87-%E0%A6%95%E0%A6%B0%E0%A6%A3%E0%A7%80%E0%A7%9F